- দুই কোম্পানির একীভূত শক্তি সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের সুবিধা নিয়ে গ্রাহকদের আরো উন্নত সেবা দেবে
- একীভূত সত্তা ৪ কোটি গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরে পরিণত হবে যা টেলিযোগাযোগ খাতে সুসম এবং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণে সহায়ক হবে
কুয়ালালামপুর ও ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ - আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ (আজিয়াটা) এবং ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড (ভারতী) বাংলাদেশে রবি আজিয়াটা লিমিটেড (রবি) এবং এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের (এয়ারটেল) কার্যক্রম একীভূত করতে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুই কোম্পানির তরফ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করার সম্ভাবনার বিষয়ে একান্ত আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর এই চুক্তি হল।
একীভূতকরণের পর, দুই কোম্পানির একীভূত সত্তা রবি নামেই ব্যবসা পরিচালনা করবে এবং একীভূত সত্তার গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটিতে। রবি এবং এয়ারটেলের যৌথ সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্কের অধিকারী হবে এই একীভূত সত্তা। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে সাশ্রয়ী মুল্যে টেলিযোগাযোগ এবং উচ্চ গতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দ্রুততার সাথে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে এবং তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করছি।
এই চুক্তির কার্যকারিতা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (রেগুলেটরি), সরকার এবং মহামান্য আদালতের অনুমোদন পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই প্রক্রিয়া আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত ক্রমবর্ধমান হারে এগিয়ে চলেছে এবং অতি অল্প সময়ে গ্রাহকের দোরগোড়ায় মোবাইল সেবা পৌঁছে গেছে। প্রস্তাবিত একীভূতকরণ এই শিল্প খাতে বিদ্যমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুরীকরণে সহায়ক হবে এবং বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সুনিশ্চিত করবে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল এর ফলে আরও মানসম্পন্ন এবং বিস্তৃত নেটওয়ার্ক নিয়ে গ্রাহকদের কাছে অধিকতর সুবিধা এবং উন্নততর ডাটা ও অন্যান্য সেবা পৌঁছে দেবে রবি।
চুক্তি সম্পাদনের ফলে শেয়ার মূলধনের পুনর্বিন্যাস হবে এবং এতে আজিয়াটা একীভূত সত্তার ৬৮.৭% নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্যদিকে ভারতী ২৫.০ শতাংশ এবং বাকি ৬.৩% বর্তমানের অপর শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমোর কাছে থাকবে।
একীভূতকরণের যৌক্তিকতা এবং লেনদেন সমন্বিতকরণ:
- এই একীভূতকরণ প্রতিযোগিতার পরিবেশ জোরদার করার মাধ্যমে গ্রাহকের জন্যে আরো উন্নততর অভিজ্ঞতা এবং অধিকতর পছন্দের সুযোগ নিয়ে আসবে
- একীভূতকরণের মাধ্যমে ৪ কোটি গ্রাহকের জন্যে তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কাভারেজ এবং উন্নততর মোবাইল ইন্টারনেট সেবার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হবে
- সবচেয়ে বিস্তৃত বিক্রয় ও বিপণন চ্যানেলের মাধ্যমে এবং দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের সহযোগিতায় বিক্রয় ও বিপণন সেবা আরো বিস্তৃত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া যাবে
- ৪ কোটি গ্রাহকের বিশাল সংখ্যার শক্তির ওপর ভর করে গ্রাহককে নিজ নেটওয়ার্কে (অন-নেট) কম মূল্যে কল করার সুযোগ প্রদান করা যাবে
- সারা বাংলাদেশ জুড়ে ইন্টারনেট সংযোগের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং দুই কোম্পানির কার্যক্রম একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের ফলে আরো সুলভে মোবাইল সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে
- এই একীভূতকরণ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করবে
- প্রস্তাবিত একীভূতকরণ বাংলাদেশ টেলিকম শিল্পখাত এবং এর বাজার কাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড সারা দেশে আরো দ্রুত গতিতে পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করবে। দেশের সার্বিক অথর্নীতি এবং জাতীয় রাজস্বে এই একীভূতকরণ উল্লেযোগ্য অবদান রাখবে।
- আশা করা যাচ্ছে যে, উন্নততর মোবাইল ডাটা ও ব্রডব্যান্ড সেবা অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা বহুগুণ বৃদ্ধি করবে, স্থানীয় মোবাইল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সহযোগী সেবার মান বাড়াবে এবং অন্যান্য খাতেও নতুন নতুন সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করবে।
- একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যবসা কাঠামো উন্নততর হলে ব্যবসায়িক লাভ এবং শেয়ার হোল্ডারদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত হবে
- রবি এবং এয়ারটেলের প্রস্তাবিত একীভূতকরণ এর পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনবে। এর ফলে একদিকে যেমন শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে যা সারাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবা বিস্তৃত করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে তাদের সক্ষমতা বাড়াবে অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা আরো সহজলভ্য হবে।
রবির প্রধান নির্বাহী সুপুন বীরাসিংহে বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রতিযোগী বহুল টেলিকমিউনিকেশন খাতে একীভূতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা মনে করি এই একীভূতকরণের মাধ্যমে আজিয়াটা এবং ভারতী এয়ারটেল উভয়েই বর্ধিত আকার এবং দক্ষতার ফলশ্রুতিতে ব্যয় সংকোচনের সুবিধা পাবে। পাশাপাশি, এর ফলে কর্মকৌশলের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন এবং গ্রাহকদের আরো সাশ্রয়ী সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে যেকোন বিনিয়োগে এই খাতের দুই শীর্ষস্থানীয় অপারেটর তাদের সম্মিলিত ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবে যা এই শিল্পের সার্বিক কল্যাণ সাধন করবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে’।
‘সামনের দিনগুলোতে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী মুল্যে সবচেয়ে সেরা মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড অফার দেওয়ার লক্ষ্যে রবি এবং এয়ারটেলের সমন্বিত শক্তিকে কাজে লাগানো হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই একীভূতকরণ গ্রাহকদের জন্যে বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করবে এবং তাদের জন্যে সবচেয়ে লাভজনক প্রস্তাবনা দেওয়া সম্ভব হবে’।
আজিয়াটার প্রেসিডেন্ট এবং গ্রুপের প্রধান নির্বাহী দাতোশ্রী জামালুদ্দিন ইব্রাহিম বলেন, ‘আজিয়াটার একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণ কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিভিন্ন দেশে আমরা নিজেদের অবস্থান জোরদার এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এধরণের একীভূতকরণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছি। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ক্যাম্বোডিয়ার মত বাজারে এধরনের একীভূতকরণ এবং আত্মীকরণে আমাদের সাফল্য বাংলাদেশের বাজারেও একীভূতকরণে আজিয়াটার নেতৃত্বদানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে’।
বাংলাদেশে আজিয়াটার দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারের বিষয়ে আবারো গুরুত্বারোপ করে জামালুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্র। আজিয়াটা সেই ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম বিনিয়োগ করে। এই অঞ্চলের অন্য সব বিনিয়োগ ক্ষেত্রের মত আজিয়াটা বাংলাদেশেরও দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শুধুমাত্র টেলিযোগাযোগ খাতেই নয় বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনগণ এবং প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে আমাদের অবদানের বিষয়েও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
ভারতী এয়াটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও (ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া) গোপাল ভিত্তাল বলেছেন, দুটি কোম্পানির শক্তিকে একত্রিত করার পেছনে অত্যন্ত যৌক্তিক কারণ রয়েছে। একীভূত এই সত্তা তার কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বমানের আরো ভালো সেবা দিতে সক্ষম হবে এবং বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।
আজিয়াটা সম্পর্কেঃ
আজিয়াটা এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং ক্যাম্বোডিয়ার মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোতে আজিয়াটার সিংহভাগ শেয়ার এবং ভারত এবং সিঙ্গাপুরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার রয়েছে।
গ্রুপের সহযোগী এবং নিয়ন্ত্রণাধীন মোবাইল অপারেটরেরা মালয়েশিয়ায় ‘সেলকম’, ইন্দোনেশিয়ায় ‘এক্সএল’, শ্রীলঙ্কায় ‘ডায়ালগ’, বাংলাদেশে ‘রবি’, ক্যাম্বোডিয়ায় ‘স্মার্ট’, ভারতে ‘আইডিয়া’ এবং সিঙ্গাপুরে ‘এমওয়ান’ নামে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
সহযোগী এবং নিয়ন্ত্রণাধীন অপারেটরদের মাধ্যমে পুরো এশিয়া জুড়ে আজিয়াটা গ্রুপের ২৬ কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। ২০১৪ সালে এই গ্রুপের আয় ছিল ১৮৭০ কোটি মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত । এশিয়া জুড়ে গ্রুপ ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান করেছে। এশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এই অঞ্চলের সেরা সংযোগ, প্রযুক্তি এবং প্রতিভার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হসেবে বিবেচিত হওয়া আজিয়াটার লক্ষ্য।
আজিয়াটা ইডটকো নামে একটি কমিউনিকেশন অবকাঠামো সেবা এবং আজিয়াটা ডিজিটাল সার্ভিসেস নামে একটি ডিজিটাল সেবা কোম্পানি চালুর মাধ্যমে তার ব্যবসার পরিধি বিস্তার করেছে।
আজিয়াটা গ্রুপ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর কর্মকান্ডের জন্যে ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে ফ্রস্ট এন্ড সুলিভান এবং ২০১০ ও ২০১১ সালে সেরা টেলিকম গ্রুপ হিসেবে এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যাওয়ার্ড এবং সেরা আঞ্চলিক মোবাইল গ্রুপ হিসেবে টেলিকম এশিয়া পুরস্কার পেয়েছে।
ভারতী এয়ারটেল সম্পর্কেঃ
বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভারতী এয়ারটেল লিমিটেডের এশিয়া এবং আফ্রিকার ২০ টি দেশে কার্যক্রম রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের শীর্ষ তিনটি কোম্পানির একটি। এই কোম্পানির সদর দপ্তর ভারতের নয়া দিল্লিতে অবস্থিত। ভারতে এই কোম্পানি টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি ওয়ারলেস সেবা, মোবাইল কমার্স, ফিক্সড লাইন, দ্রুত গতির ডিএসএল ব্রডব্যান্ড, আইপিটিভি, ডিটিএইচ, এন্টার প্রাইজ সেবাসহ টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারীদের আভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার সেবা দিয়ে থাকে। বাকি বিশ্বে তারা টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি ওয়ারলেস সেবা দেয় এবং মোবাইল কমার্স করে থাকে। ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ভারতী এয়ারটেলের ৩৪ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক রয়েছে।